তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করতে দরকার ছয় হাজার জনবল

Passenger Voice    |    ০১:৫৪ পিএম, ২০২৪-০১-৩১


তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করতে দরকার ছয় হাজার জনবল

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সার্বিক নিরাপত্তা, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দিতে প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন। আগামী অক্টোবরে নতুন টার্মিনালটি চালুর পরিকল্পনা করলেও এ পরিমাণ প্রশিক্ষিত জনবলের সংস্থান বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আপাতত করতে পারছে না। ফলে আট মাস পর খুলে দেয়া হলেও এটি প্রথম দিকেই পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, বেবিচকের নিজস্ব জনবল ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মীদের দিয়ে আপাতত তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রয়োজনীয় জনবল সংযুক্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তখন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু করার পরিকল্পনা বেবিচকের। 

টার্মিনাল-৩-এ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে কী পরিমাণ জনবল প্রয়োজন, তার প্রাথমিক একটি প্রাক্কলন করেছে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রথম পর্যায়’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়ি। তাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী, চার শিফটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা টার্মিনালটি সচল রাখতে প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন। এর মধ্যে শুধু নিরাপত্তার জন্যই লাগবে প্রায় চার হাজার জনবল। বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ বিমানবন্দরের যাত্রীসেবায় ২৮-২৯টির মতো সংস্থা কাজ করে থাকে। প্রত্যেকটি সংস্থার জন্যই নতুন জনবল প্রয়োজন হবে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে জিটুজির ভিত্তিতে জাপানের প্রতিষ্ঠানকে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে জাপানের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বেবিচক। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ প্রতিষ্ঠানই নতুন টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পেতে যাচ্ছে। তারাই প্রয়োজনীয় জনবলের সংস্থান করবে। তবে সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও বেবিচক যে প্রক্রিয়ায় পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নিযুক্তের উদ্যোগ নিয়েছে, পুরোদমে টার্মিনাল চালু করতে সময় লাগবে আরো প্রায় এক বছর।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, নতুন টার্মিনালটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষ একটি ‘ট্রানজেকশনাল অ্যাডভাইজার’ নিযুক্ত করেছে। বর্তমানে এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে। আগামী এপ্রিল অথবা মে মাসে সেটি হাতে পাওয়ার আশা করছেন বেবিচকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সবকিছু ঠিকঠাক পাওয়া গেলে টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দেয়ার জন্য আগ্রহী জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগস্ট নাগাদ চুক্তি করা সম্ভব হবে। আর চুক্তি সম্পন্নের পর টার্মিনাল পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হতে প্রতিষ্ঠানটির সময় লাগবে প্রায় ছয় মাস। অর্থাৎ টার্মিনাল-৩ পুরোপুরি চালুর জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিতে হবে।

যতদিন পর্যন্ত জাপানি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত না হচ্ছে, ততদিন আংশিকভাবে টার্মিনাল-৩ চালু রাখার কথা জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‌৬ এপ্রিল আমরা টার্মিনাল-৩ বুঝে নেব। কিন্তু এটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল সিভিল এভিয়েশনের নেই। আমাদের যেটা আছে, সেটা দিয়েই চেষ্টা করছি। আমরা ইমিগ্রেশন, কাস্টমস সব চালু করে দেব। হয়তোবা এখন পুরোপুরি কিংবা পুরোদমে চালু করা সম্ভব না।’

নতুন টার্মিনাল পুরোপুরি পরিচালনার জন্য অন্তত ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অক্টোবরে তো আমরা অপারেশন ডিক্লেয়ার করব। তখন থেকেই এ বিমানবন্দরটা যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তবে এটা হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে আমরা কাজ চালাব। দ্বিতীয় ধাপে জাপানিজরা যখন রেডি হয়ে যাবে, তাদের জনবল রেডি হয়ে যাবে, তখন পুরোপুরি চালু হবে। তবে এ পরিকল্পনা কেবল বেবিচকের। সরকার প্রয়োজন মনে করলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর টার্মিনাল চালু করতে পারে।’ 

বেবিচক পরিকল্পনা করছে নিজস্ব জনবল ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দিয়ে শুরুতে তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবার কাজ শুরু করার। এজন্য সংস্থাটিকে ট্রলি, লিফট, ক্রেনসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় যুক্ত জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি টার্মিনাল-৩-এর কিছু সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও করতে হবে। এজন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপানের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এ প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। তারা ‘‌অপারেশন মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার’ মডেলের একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এ টাকা সরবরাহ করবে। পরবর্তী সময়ে গ্রাউন্ড পরিষেবায় যুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তা সমন্বয় করা হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, জাপানের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম টার্মিনাল-৩ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণসহ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ কাজে তাদেরই নিযুক্ত করা হতে পারে। তবে টার্মিনালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে বেবিচকের হাতে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‌আকাশ নিরাপত্তা, কাস্টমস-ইমিগ্রেশন—এ কাজগুলো আমরা নিজেরাই করব। অন্যদিকে বিমানবন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরে একজন যাত্রী প্রবেশের পর থেকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত যেসব সুবিধা লাগে—ট্রলি থেকে আরম্ভ করে চেক-ইন করানো, ইমিগ্রেশনে নিয়ে যাওয়া, ইমিগ্রেশন থেকে বোর্ডিং করানো এবং পুরো এয়ারপোর্টের ম্যানেজমেন্টের কাজ করবে জাপানের প্রতিষ্ঠান।’

‌হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনুমোদিত হয়। এটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’। 

তৃতীয় টার্মিনালের ‘‌‌সফট ওপেনিং’ করা হয়েছে গত বছরের ৭ অক্টোবর। বেবিচকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালুর পর শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়বে আড়াই গুণ। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৯৩ শতাংশ। সূত্র: বণিক বার্তা


প্যা/ভ/ম